পুরুষ ২ লাখ, নারী লাখ টাকা বেতন হারিয়েছেন

গত বছর দেশে ফিরেছেন ৪ লাখ কর্মী। এর মধ্যে ৭৪ শতাংশকেই নিয়োগকর্তা বাধ্য করেছেন দেশে ফিরতে।

ফাইল ছবি: প্রথম আলো

গত বছরের শুরুর দিকে করোনার প্রভাবে ধীরে ধীরে বেতন বাকি পড়তে থাকে প্রবাসী কর্মীদের। এরপর নানা কারণে দেশে ফিরতে থাকেন তাঁরা। এর মধ্যে ৭৪ শতাংশকে তাঁদের নিয়োগকর্তা চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরতে বাধ্য করেন। চাকরি ছেড়ে আসায় পুরুষ প্রবাসী কর্মী বেতন হারিয়েছেন গড়ে এক লাখ ৯৪ হাজার টাকা, আর নারী কর্মীরা ৯৭ হাজার টাকা।

দেশে ফেরা ১ হাজার ১৬০ জন প্রবাসী কর্মীর ওপর জরিপ চালিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। ৪৫টি জেলার এসব কর্মী মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশ থেকে ফিরে এসেছেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সম্মিলিত সংগঠন সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্র্যান্টস (বিসিএসএম) ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রামরু যৌথভাবে জরিপটি করেছে। গতকাল বুধবার ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়।

জরিপ বলছে, করোনা সংক্রমণ শুরুর আগে গড়ে অভিবাসী কর্মীদের বেতন ছিল ২৭ হাজার ৯৭০ টাকা। ফিরে আসার সময় ছয় মাসের বেতন আনতে পারেননি কর্মীরা।

সরকারি হিসাব বলছে, গত বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন চার লাখ কর্মী। এর মধ্যে জরিপের জন্য বেছে নেওয়া মধ্যপ্রাচ্যের ৬টি দেশ থেকে ফিরেছেন ৮০ শতাংশ, যা প্রায় সোয়া ৩ লাখ। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ সৌদি আরব থেকে ফেরা। এর বাইরে ১৫ শতাংশ করে আরব আমিরাত ও ওমান, ১১ শতাংশ কুয়েত, ১০ শতাংশ কাতার ও ৪ শতাংশ বাহরাইন থেকে ফিরেছেন। তবে নারী কর্মীদের ৭৭ শতাংশই ফিরেছেন সৌদি আরব থেকে।

জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরতে গিয়ে বিসিএসএমের চেয়ার ও রামরুর নির্বাহী পরিচালক সি আর আবরার বলেন, চাপ দিয়ে বিপদাপন্ন কর্মীদের দেশে ফিরতে বাধ্য করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কর্মী পাঠানো দেশটিকে চাপ দেওয়া হয়েছে তাদের অনিয়মিত হয়ে পড়া বা কারাগারে থাকা কর্মীকে জরুরি ফিরিয়ে নিতে। আন্তর্জাতিক কোনো মানদণ্ড না মেনে অনৈতিকভাবে এসব করা হয়েছে। বিশেষ ফ্লাইটে করে কর্মী ফিরিয়ে আনতে হয়েছে বাংলাদেশকেও।

ফিরে আসার সময় ৬ মাসের বেতন বকেয়া ছিল কর্মীদের। ফিরে আসা কর্মীদের ৯৮ শতাংশই সহায়তা চান। গত বছর ফেব্রুয়ারির পর হয় চাকরি হারিয়েছেন, নয়তো বেতন কমেছে।

জরিপ বলছে, জরিপে অংশ নেওয়া কর্মীরা গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারির পর পাসপোর্ট বা আউটপাস (ভ্রমণের বৈধ অনুমতিপত্র) নিয়ে ফিরেছেন। তাঁদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ পুরুষ কর্মী। ৭৪ শতাংশ নিয়োগকর্তার ইচ্ছায় ফিরলেও বাকি ২৬ শতাংশ ফিরেছেন সাধারণ ক্ষমার আওতায় পুলিশের হাতে ধরা দিয়ে, কারাগার থেকে ও করোনা মহামারির ভয়ে।

গত ২৫ মার্চ থেকে ৬ মে পর্যন্ত সময়ে জরিপটি করা হয়েছে। জরিপে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারির আগে অধিকাংশ কর্মী নিয়মিত চাকরিতে ছিলেন। ফিরে আসা কর্মীর মধ্যে ৭২ শতাংশ তাঁরাই। ১১ শতাংশের বৈধ ভিসা না থাকলেও তাঁরা বিভিন্ন কাজে যুক্ত ছিলেন। ৭ শতাংশ বৈধভাবে খণ্ডকালীন কাজে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন। ৫ শতাংশের বৈধ চুক্তির আওতায় কোনো কাজ ছিল না। ৩ শতাংশের ভিসা না থাকলেও ছোট ব্যবসায় ছিলেন। আর ২ শতাংশের ভিসা বা কাজ কোনোটাই ছিল না।

এর আগে গত বছরের মে-জুন সময়ে ১ হাজার ৪৮৬ জনের ওপর একটি জরিপ চালায় আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। এতে ২৭ শতাংশ বকেয়া বেতন রেখে ফেরার কথা জানান। তবে গতকাল অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম বলেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠান ফিরে আসা ২৪৮ জন কর্মীর ওপর একটি গবেষণা চালিয়েছিল। এতেও ৬০ শতাংশ কর্মী বকেয়া বেতন রেখে ফিরে আসার কথা জানিয়েছেন।

জরিপ বলছে, যাঁরা দেশে ফিরেছেন, তাঁদের মধ্যে গত বছরের ফেব্রুয়ারির পর চাকরি হারিয়েছেন ৪৮ শতাংশ। চাকরিতে থাকা কর্মীদের ৩৮ শতাংশ কর্মীর বেতন কমে যায়। চাকরি করলেও করোনার প্রভাবে নিয়মিত পাননি ৬৭ শতাংশ প্রবাসী কর্মী। জরিপ বলছে, দেশে ফিরে ভালো নেই প্রবাসী কর্মীরা। ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ কর্মী যেকোনো ধরনের সহায়তা চান। তবে তাঁদের প্রায় অর্ধেক কর্মী সুযোগ পেলে আবার বিদেশে যেতে চান।

অনুষ্ঠানে যাঁরা বিদেশে কাজের জন্য গিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁদের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ে সোচ্চার হতে এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানানো হয়।